ছি! ছি! ছি! এতো পড়াশোনা করে শেষ পর্যন্ত পিজ্জা বেঁচো !! ইদানিং শুনলাম জামা কাপড় বেঁচো, বাটা মশলা বেঁচো, মাছ কেটে বেচো ! বাপরে বাপ বিয়ে বাড়ির রান্নাও করো !! তাহলে এতো পড়াশোনা করছো কেন।এগুলোই যদি করবা তাহলে শুধু ম্যাট্রিক পাশ করলেই হতো। শুধু শুধু পড়াশুনা করে টাকা খরচ করছো। এতো পড়াশোনা করে যদি চাকরি বাকরি করো তাও ভালো। তা না কি বেঁচা বেঁচি শুরু করছ !!!
হ্যাঁ, কথা গুলো কেবল আমার নয়। এ দেশে ছোট বড় সকল উদ্যোক্তাদের শুরুর গল্প এটা। এরকম কথার সম্মুখিন হননি এমন সফল ব্যাক্তি খুঁজে পাওয়া ভার।তবে মজার কথা হচ্ছে, এগুলোই আপনার আমার আমাদের সফলতার প্রথম বাঁধা। যা আপনার আমার পরিবার, প্রতিবেশি এবং সামাজিক বলয়ে পঁচা মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের অসুস্থ মগজে লালিত হয়ে থাকে। আর আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য এই সমস্যা আরো প্রবল।
আমি ইদানিং খুব আত্মবিশ্বাসের সাথেই এসব বস্তাপঁচা প্রশ্নের উত্তর দেই “হ্যাঁ এসব বেঁচি”, কোনো সমস্যা?
যখন দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী সম্বলিত উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সার্টিফিকেটের বোঝা বেঁধে একটা চাকরির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দৌঁড়েছি। যখন মামা, চাচা, খালু বা ফুপাগন আমার হয়ে কোথাও সুপারিশ করেনি। যখন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে ব্যাংকে লোনের জন্য দিনের পর দিন ব্যাংক গুলোর পিছনে ছুটে হয়রানি হয়েও লোন পাইনি, তখন তো কেউ ডেকে হাতে টাকা দিয়ে বলেনি যাও কিছু করে দেখাও! এখন যখন নিজেই নিজের পরিচয় নিজে তৈরি করার জন্য দিনের পর দিন পরিশ্রম করে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটছি তখনই তাদের সব মাথাব্যাথা !
গল্পটা শুধু আমার নয়, এটি আমার মত শত উদ্যোক্তার গল্প যারা নিজের জন্য কিছু করতে চায়। আসলে তাদের মাথাব্যাথা আমার কাজ নিয়ে নয়। তাদের মাথাব্যাথা আমার সফলতা, আমার ভাল থাকা নিয়ে। মোদ্দাকথা, আমার একটি নিজের পরিচয় আছে এটাই আমার সুখ। নিজের পরিচয় তৈরী করা যে কতটা আত্মতৃপ্তি তা কি তারা জানবে ? তাদের সময় কাটে চুলে বিলি কেটে, ভারতীয় সিরিয়ালের গল্প বলে এবং তারা হাত খরচার জন্য নিয়মিত জামাইয়ের পকেট কাটে ।
এরা আসলে নেতিবাচক দশাগ্রস্থ মানুষ। এরা জীবনে নিজেও কিছু করতে পারেনি অন্যকেও করতে দেখলে এদের সর্বাঙ্গে জ্বলে। তবে কি এসব মানুষকে জীবন থেকে বাদ দিবেন ? না তা নয়, এদেরকে এদের মত থাকতে দিন। এদের কথাকে গুরুত্বহীন ভাবুন। আপনার কাজ আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে কাজ হোক ছোট কিংবা বড়। যে কাজে আমার সততা,নিষ্ঠা,পরিশ্রম মিশে আছে সে কাজই আমার পরিচয়। আর আমার এই পরিচয়ই আমার গর্ব।
খেয়াল করে দেখবেন এসব নেতিবাচক মানুষগুলো জীবনে কোনদিন আপনার কিংবা সমাজের কোন উপকারে আসেনি। এক কথায় এরা বেকার, দেশের বোঝা। প্রতিবেশি,আত্নীয় স্বজন কেউ না খেয়ে থাকলে এরা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এরা মূলত কুয়োর ব্যাঙ। এরা ফেইসবুক চালাবে নিজে কোন পোস্ট দেয়ার জন্য নয় বরং অন্যের পোস্ট দেখার জন্য। এদের নিয়ে সময় নষ্ট করার সময় আপনার আমার হাতে মূলত: নেই। বরং এদের মানসিকতার উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। তৈরী করতে পারেন একটি মানসিক উন্নয়ন কেন্দ্র যেখানে তারা মানবিক মূল্যবোধ শিক্ষা নিতে পারবে।
তবে আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে সবাইকে পাশে পাবেন। কিন্ত প্রতিষ্ঠিত হতে কেউ সাহায্য করবে না সকলেই আপনার পা ধরে টেনে নীচে নামাবে। আর এজন্য আপনার পায়ে জোড় থাকতে হবে খুব কষে একটা লাথি মেরে আপনার পায়ে ধরে থাকা অদৃশ্য হাতগুলোকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যে। তবেই আপনি সফল এবং সফল আপনার স্বপ্ন।
একজন উদ্যোক্তার কত স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে এক একটা উদ্যোগের সাথে সেটা শুধু একজন উদ্যোক্তাই বোঝে। কতিপয় অসুস্থ মানুষের কিছু কথার জন্য কি একজন উদ্যোক্তার স্বপ্নের মৃত্যু হবে? সেটা কখনই সম্ভব নয়, বরং পূর্ণ উদ্যোম আর শক্তি দিয়ে এগিয়ে যান আপনার কাংখিত স্বপ্নের পথে। সফলতা একদিন আসবেই।
পিংকী
১৮|০৪|২০২১
Leave a Reply