করোনা ভাইরাসের মতো যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কিভাবে টিকে থাকা যায় তার উদাহরণ তাক লাগানো সফল খামারি মামুনুর রশীদ। ডিমের দামে ধস, মুরগির দামে মন্দা; ঠিক সে সময় মামুনুর রশীদ আয় করেন মাসে ১ লক্ষ টাকা!
বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়েছেন ৭৪ শতক ও নিজের সামান্য জমিতে চাষ করে জুটতো না সংসারের খরচ। লেয়ার মুরগির খামার করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। মুক্তি পেয়েছেন আর্থিক দৈন্যতা থেকে। ৬ হাজার লেয়ার মুরগি থেকে এখন তাঁর মাসিক আয় ১ লক্ষ টাকা।
ঠাকুরগাঁও জেলা রাণীশংকৈল উপজেলার ২নং নেকমরদ ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে লেয়ার খামারি কৃষক মামুনুর রশীদ। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে লেয়ার মুরগি পালন করছেন। কঠোর পরিশ্রম আর অভিজ্ঞতার ফলে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে সক্ষম হয়েছেন। মোকাবেলা করছেন জীবনের একটির পর একটি কঠিন ধাপ।
এলাকার বেশ কয়েকটি খামারের মধ্যে তিনি এখন সফল মুরগি খামারি হিসেবে পরিচিত।এক মেয়ে ও এক ছেলের পড়াশোনার খরচ, নিজের সংসারের খরচ ছাড়াও মিলছে বাড়তি আয়। খামার থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ব্যাংক ঋণ শোধ করা, সংসারের খরচ মেটাতে সক্ষম তারা।
বাবার ৪৫ কাঠা জমির উপর খামার শুরু করেছিলেন। হাতে টাকার সংকটে নিয়েছিলেন ব্যাংক ঋণ। এখন তার ব্যাংকঋণ প্রায় শোধ করে জমিয়েছেন টাকা। আগামীতে তার খামারটা আরও বড় করার জন্য চেষ্টা করছেন। করোনার মধ্যেও খামারে তুলেছেন ৫ হাজার ৬০০ লেয়ারের বাচ্চা। ডিমপাড়া মুরগি বিক্রি করে সেই খাঁচায় তুলবেন নতুন এসব মুরগি।
ঠাকুরগাঁও জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো রাণীশংকৈল উপজেলার বহু দরিদ্র পরিবার হাঁস, মুরগি, গরু পালনের মধ্য দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন, হয়েছে তাদের দিন বদল।
মামুনুর রশীদের পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। সংসারের টানাপোড়ন যেন কামড়ে ধরে ছিল। বন্ধুর পরামর্শে এলাকায় কৃষিকাজের পাশাপাশি শুরু করেন লেয়ার মুরগির খামার। এক বছরের মাথায় নিজের সাফল্য দেখে আশ্চর্য হয়ে যান তিনি। ৫ হাজার ৬০০ টি মুরগি দিয়ে শুরু করা খামারে এখন ৬ হাজার মুরগি। ডিম বিক্রি করেছেন ৮ টাকা পিস। তবে, করোনায় দাম কমার পর নিজ বাড়িতে খুচরা ডিম বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছেন ঘাটতি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের শুরুতে মুরগির খামার করার জন্য ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকার মতো ঋণ গ্রহণ করেন। দু-বছরের মাথায় ঋণ পরিশোধ করে জমাতে থাকে মূলধন।
আজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং রোজ বুধবার মামুনুর রশীদের সঙ্গে কথা হলে তিনি মুক্তি টিভির ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি মোঃ আকতারুল ইসলাম আক্তারকে জানান, আশেপাশের কয়েকটি খামারে ব্রয়লার মুরগির চাষ করলেও ডিমে বেশি লাভ হওয়ায় লেয়ার মুরগির খামার করেছেন তিনি।
তিনি জানান, ডিম, মুরগি ও একদিনের বাচ্চার পাইকারি এক ডিলারের কাছে থেকে ৫ হাজার ৬০০ টি বাচ্চা কিনেছিলেন। এরপর বাড়ির সামনের নেকমরদ বঙ্গবন্ধু কলেজের কলেজের পশ্চিম কাশিপুর যাওয়ার সড়কের উত্তর পাশে কৃষি জমির উপর তোলেন খামার। প্রথমে টাকার সংকুলান না হওয়ায় ৪ লাখ টাকার মতো ঋণ নিয়েছিলেন। বর্তমানে খামারে রয়েছে ৬ হাজার লেয়ার মুরগি। প্রায় ৯৫ শতাংশ মুরগি ডিম পাড়ছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ লাইন থাকায় সহজেই পানির ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তিনি।
Leave a Reply